রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

ফেঁসে যাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন, নথি উঠছে জেলা প্রশাসনে

নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো হম্বিতম্বি কাজে আসল না। বিভিন্ন জায়গায় তদবির করেও পার পাচ্ছেন না বাহুবলের ৬ নম্বর মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন লিয়াকত। অথচ ত্রাণ চুরির অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য লকডাউন আইন ভেঙ্গে নিজ ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেছিলেন। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে আসেনি।

গরীবের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণ উচ্চবিত্তদের দেয়া এবং ত্রাণ গ্রহনকারীর নামের তালিকায় ঘষামাজার অপরাধে ফেঁসে যাচ্ছেন বাহুবলের ৬ নম্বর মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইফুদ্দিন লিয়াকত। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের পর বাহুবল উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি চেয়ারম্যানের এই অপকর্মের প্রমাণ পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনটি বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছেন।

জানতে চাইলে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেছেন, মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ত্রাণ বিতরণের অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদনটি জেলা প্রশাসনে এসেছে। আমি বলেছি বিষয়টি নথিতে উত্থাপনের জন্য। অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করে কেউ পার পাবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কর্মহীন নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কিন্তু হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ৬নম্বর মিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন লিয়াকত এর ত্রাণ বিতরণে ব্যাপক অনিয়মও আত্মসাতের ফলে এলাকার শত শত অসহায়, দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ত্রাণের তালিকায় রয়েছে চেয়ারম্যান এর শশুড়, শাশুড়ী, শ্যালক, শ্যালকপুত্র, সমন্ধিকের বউ, তৃতীয় স্ত্রীর বড়বোনসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন। অনেকেই আবার একাধিকবার ত্রাণ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মিরপুর বাজারের কয়েকজন বিশিষ্ট কোটিপতিসহ ১৮ জন ব্যবসায়ী রয়েছে। এমনকী ত্রাণ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে গায়েবি তালিকা করা হয়েছে এবং পিতা/স্বামীর নামেও রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও গড়মিল। আবার অনেকের নাম তালিকায় থাকলেও ত্রাণ না দিয়ে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ত্রাণ উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় রয়েছে ঘষামাঝারও অভিযোগ।

এরপরই গত ১১ মে ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতকারী ৬নম্বর মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এলকাবাসী। এতে মিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিনের পদত্যাগ চাই, প্রধানমন্ত্রীর উপহার ভেস্তে যেতে দেব না, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় চাল চোরের ঠাঁই নাই, চাল চোর ও চাল আত্মসাতকারী চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন এর বিচারের দাবীসহ বিভিন্ন লেখাযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ভুক্তভোগী মানুষ শ্লোগান দেন। এসময় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেছিলেন, ত্রাণের তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর উপহার আমাদের হাতে না দিয়ে স্বাক্ষর ও টিপসই জাল করে আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান। তারা আরও বলেন, অন্য ইউনিয়নের একই পরিবারের তিন জনের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্তিসহ শতাধিক ভুয়া নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্তি করে ত্রাণ সামগ্রী আত্মসাৎ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারি কমিশনার (ভূমি) খ্রিস্টফার হিমেল রিছিলকে আহ্বায়ক করে বাহুবল উপজেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটি তদন্ত কাজ শেষ করে গত সপ্তাহে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন তুলে দেয়। এরপরে প্রতিবেদনটি হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়।

জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ও বাহুবলের সহকারি কমিশনার (ভূমি) খ্রিস্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ত্রাণ বিতরণে যা যা পাওয়া গেছে তাই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। কি কি সত্যতা পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি স্পষ্টভাষায় কিছ বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেছেন, তদন্তে কিছুই লুকানো হয়নি। সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য বাহুবল মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আলমগীর কবীর বলেন, তদন্তে ত্রাণ গ্রহনকারীর তালিকায় ঘষামাঝা, গরীবের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণ উচ্চ বিত্তদের মধ্যে বিতরণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com